স্থাপত্যশৈলীর এক অপরূপ নিদর্শন: কড়াপুর মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ

কড়াপুর মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ
কড়াপুর মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অপরূপ নিদর্শন। বরিশাল জেলার সদর উপজেলাধীন উত্তর কড়াপুর নামক গ্রামে এ মসজিদ অবস্থিত। দোতলাবিশিষ্ট মসজিদটির পূর্ব দিকে বড় আকারের একটি দিঘি এবং পশ্চিম দিকে ছোট একটি পুকুর রয়েছে। বরিশাল সদরের নথুল্লাবাদ বাসস্টেশন এবং হাতেম আলী চৌমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা ও মাহেদ্র গাড়িযোগে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে খুব সহজে এ মসজিদটিতে পৌঁছানো যায়।
মানচিত্র: কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদের অবস্থান।
বাংলাদেশের দক্ষিণে বরিশাল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির ঐতিহাসিক কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। ঐতিহাসিকদের মতে, সম্ভবত খ্রিস্টীয় ১৮ শতকের শুরুর দিকে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, মসজিদটির মূল প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ নামক একজন ব্যক্তি। তিনি ব্রিটিশ শাসন আমলের শুরুর দিকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন। এ নির্বাসনকালে তিনি তাঁর উমেদপুরের জমিদারি হারান। তিনি নির্বাসন থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর পরে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি কড়াপুর গ্রামের দোতলাবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি মসজিদ পাশে দিঘি ও পুকুর খনন করেন।

মসজিদটি মূলত ৩.০ মিটার উঁচু ভিত্তি বা দ্বিতীয় তলার উপর নির্মিত। উঁচু ভিত্তির উপর বা দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত মূল প্রার্থনা কক্ষ বা মসজিদ কক্ষটির দৈর্ঘ্য ১৩.৫ মিটার ও প্রস্থ ৬.০ মিটার। প্রার্থনা কক্ষ বা মসজিদটির সামনে ছাদহীন একটি আঙ্গিনা রয়েছে। ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত আয়তাকার এ মসজিদটির দেয়ালগুলো ১.৫ মিটার পুরু।

এ মসজিদটির স্থাপত্যশৈলীর সাথে পুরাতন ঢাকায় শায়েস্তা খান কর্তৃক নির্মিত শায়েস্তা খান মসজিদের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মসজিদটির পূর্ব দিকের দেয়ালে ৩ টি প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশপথগুলোর প্রত্যেকটিতে দু’টি করে খিলান রয়েছে। বাহিরের খিলানটি বহুপত্রাকার নকশাযুক্ত (multi-foil) ও অপেক্ষাকৃত উঁচু। ভিতরের খিলানটি শিখরবিশিষ্ট(lancet) বা গোথিক (gothic)। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে প্রবেশপথগুলোর অনুরূপ খিলানবিশিষ্ট ১টি করে জানালা রয়েছে। মসজিদটির অভ্যন্তরের পশ্চিম দেয়ালে ৩ টি মিহরাব রয়েছে। এ মিহরাবগুলো শিখরবিশিষ্ট খিলান নকশায় সজ্জিত রয়েছে। ৩ টি মিহরাবের মধ্যে দেয়ালের মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। এছাড়া মসজিদটির অভ্যন্তরের দেয়ালে একাধিক কুলঙ্গি রয়েছে। মসজিদটির উপরে ৩ টি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের উপরে কারুকার্যবিশিষ্ট শিখর (finial) রয়েছে। ছাদের মাঝের গম্বুজটি আকারে একটু বড়। গম্বুজ ৩ টির চারদিকে অর্থাৎ ছাদের চারদিক ঘিরে ৮ টি বড় ও ১৬ টি ছোট আকারের মিনারসহ সর্বমোট ২৪ টি মিনার রয়েছে। মসজিদটির বাহির দেয়াল, অভ্যন্তর দেয়াল, গম্বুজ, মিনার ও কার্ণিসে বিভিন্ন লতাপাতা ও ফুলের সুন্দর অলংকরণ রয়েছে। দোতলায় মূল প্রার্থনা কক্ষ বা মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে ১৬ ধাপবিশিষ্ট একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়িটির নিচের ফাঁকা স্থানটিতে ২ টি কবর বা সমাধী রয়েছে। এ মসজিদের নিচতলায় একাধিক কক্ষ রয়েছে। এ কক্ষসমূহে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মুসলিম স্থাপত্যিক এ নিদর্শনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত এবং তত্ত্বাবধানে রয়েছে। [মো. শাহীন আলম]
Follow Us in Our YouTube channel: GEONATCUL