শিলার সংজ্ঞা এবং শ্রেণীবিভাগ

দুই বা ততোধিক খনিজ প্রাকৃতিক উপায়ে একত্রিত হয়ে যে কঠিন বা নরম পদার্থ গঠন করে, তাকে শিলা (Rock) বলা হয়। শিলা বলতে কেবল শক্ত পাথরই বোঝায় না— নুড়ি, কাঁকর, বালি, মাটি, কাদা, প্রভৃতিও শিলার অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর ভূত্বক বিভিন্ন প্রকার শিলার সমন্বয়ে গঠিত। ভূবিজ্ঞানীরা শিলার খনিজ উপাদান বিশ্লেষণ করে এর বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে শিলার উৎপত্তিস্থল ও গঠনের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। পৃথিবী মূলত গলিত লোহা, ঘনবদ্ধ শিলা, গ্রানাইট, পাললিক শিলা, ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত।

শিলার শ্রেণীবিভাগ:

ভূ-পৃষ্ঠে পাওয়া শিলার গঠন, কাঠামো, খনিজ উপাদান, আকৃতি, আকার, কঠোরতা ও ভঙ্গুরতার মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শিলাগুলোকে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। উৎপত্তি ও গঠন প্রক্রিয়া অনুসারে পৃথিবীর শিলাগুলোকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়—

১. আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks):

এগুলো গলিত লাভা বা ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হয়ে গঠিত হয়।

  • বৈশিষ্ট্য: স্ফটিকাকার গঠন, সাধারণত কঠিন ও শক্ত; স্তরবিন্যাস থাকে না।
  • উদাহরণ: গ্রানাইট, ব্যাসল্ট, ডায়োরাইট, পিউমিস।
  • অবস্থান: পাহাড়-পর্বত, আগ্নেয়গিরি অঞ্চল ও ভূত্বকের গভীরে।

২. পাললিক শিলা (Sedimentary Rocks):

বিভিন্ন শিলাখণ্ড, খনিজ কণা, বালি, কাদা, চুনাপাথর, ইত্যাদি নদী, হ্রদ বা সমুদ্রের তলদেশে জমা হয়ে স্তর আকারে জমাট বাঁধলে এ শিলা গঠিত হয়।

  • বৈশিষ্ট্য: স্তরবিন্যাসযুক্ত, তুলনামূলক নরম, জীবাশ্ম পাওয়া যায়।
  • উদাহরণ: বেলেপাথর, চুনাপাথর, কংগ্লোমারেট, শেল।
  • অবস্থান: নদী উপত্যকা, হ্রদ, সমুদ্রতল, ডেল্টা অঞ্চল।

৩. রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rocks):

আগ্নেয় বা পাললিক শিলা ভূগর্ভস্থ প্রচণ্ড তাপ, চাপ ও রাসায়নিক প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে নতুন গুণাবলি সম্পন্ন শিলায় রূপান্তরিত হয়।

  • বৈশিষ্ট্য: কঠিন, ঝকঝকে, নতুন খনিজ গঠন, প্রায়শই দাগ বা শিরা থাকে।
  • উদাহরণ: মার্বেল (চুনাপাথর থেকে), স্লেট (শেল থেকে), নাইস (গ্রানাইট থেকে), কোয়ার্টজাইট (বেলেপাথর থেকে)।
  • অবস্থান: পাহাড় গঠনের অঞ্চল, ভূগর্ভের গভীর অংশ।
শিলা উৎপত্তি/গঠন প্রক্রিয়া বৈশিষ্ট্য উদাহরণ অবস্থান
আগ্নেয় শিলা (Igneous) গলিত লাভা বা ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হয়ে গঠিত স্ফটিকাকার, শক্ত ও কঠিন, স্তরবিন্যাস নেই গ্রানাইট, ব্যাসল্ট, ডায়োরাইট, পিউমিস পাহাড়-পর্বত, আগ্নেয়গিরি অঞ্চল, ভূত্বকের গভীরে
পাললিক শিলা (Sedimentary) নদী, হ্রদ বা সমুদ্রের তলদেশে খনিজ ও শিলাখণ্ড স্তর আকারে জমা হয়ে গঠিত স্তরবিন্যাসযুক্ত, তুলনামূলক নরম, জীবাশ্ম পাওয়া যায় বেলেপাথর, চুনাপাথর, কংগ্লোমারেট, শেল নদী উপত্যকা, হ্রদ, সমুদ্রতল, ডেল্টা
রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic) আগ্নেয় বা পাললিক শিলা প্রচণ্ড তাপ, চাপ ও রাসায়নিক প্রভাবে পরিবর্তিত অত্যন্ত কঠিন, ঝকঝকে, নতুন খনিজ গঠন, শিরা বা দাগ থাকে মার্বেল, স্লেট, নাইস, কোয়ার্টজাইট পাহাড় গঠনের অঞ্চল, ভূগর্ভের গভীর অংশ

✍️ লেখক: মো. শাহীন আলম


🔗 সহায়িকা:
১। Singh, Savindra, (2009), Physical Geography, Prayag Pustak Bhawan, Allahbad, India;
২। রহমান, মোহাম্মদ আরিফুর, (২০১৭ – ২০১৮), কবির পাবলিকেশনস, ঢাকা;
৩। রউফ, কাজী আবদুর, (২০০২), প্রাকৃতিক পরিবেশ, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা;
৪। রউফ, কাজী আবদুর, (২০১১), প্রাকৃতিক ভূগোল পরিচিতি, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা;
৫। Strahler, A. N. (1992). Physical Geography: Science and Systems of the Human Environment. New York: Wiley;


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


ওয়েগনারের মহাদেশ সঞ্চালন তত্ত্ব

কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি

দ্রাঘিমারেখার ব্যবহার: যে কোনো স্থান-দেশের সময়ের পার্থক্য নির্ণয়


Leave a Reply