শিলুয়ার প্রাচীন কীর্তি | ফেনী

শিলুয়ার প্রাচীন কীর্তি
শিলুয়ার প্রাচীন কীর্তি বাংলাদেশের ফেনী জেলাধীন ছাগলনাইয়া উপজেলার শিলুয়া নামক গ্রামে অবস্থিত। ফেনী জেলা শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ৯ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে পাঠাননগর ইউনিয়নের শিলুয়া গ্রামে অবস্থিত এ প্রাচীন কীর্তিটিতে পৌঁছানো যায়। প্রাচীন শিলামূর্তির ভগ্নাবশেষ উদ্ধারের কারণে এ স্থানটি শিলুয়া বা শিল্লা নামে পরিচিতি লাভ করে। কালক্রমে এ গ্রামেরও নামকরণ হয় শিলুয়া।
শিলুয়া গ্রামের এ কীর্তি স্থানটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বলে অনেক গবেষক মনে করেন। এটি একটি অনুচ্চ ও সমতল প্রত্নতাত্ত্বিক ঢিবি। প্রত্নতাত্ত্বিক এ স্থানে কোনো প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থাকার বিষয়ে কোনো কোনো গবেষক সন্দেহ পোষণ করেন। এ ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করলে এ স্থানটির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে এ স্থানটিতে মূর্তির একটি ভগ্নাবশেষ রয়েছে। ভগ্নাবশেষটি বেলে পাথরের তৈরি এবং আকারে অনেক বড়। পাদস্তম্ভমূলের উপরে অবস্থিত মূর্তিটির নিম্নাংশ বর্তমানে টিকে রয়েছে। মূর্তিটির বাদ বাকি উপরের অংশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। বর্তমানে টিকে থাকা অংশ থেকে অনুমান করা হয় যে, এটি একটি বড় আকারের (colossal) মূর্তি ছিল।

বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় যে, শিলুয়া গ্রামের এ মূর্তিটির পাদস্তম্ভমূলে ক্ষুদ্র লিপি উৎকীর্ণ ছিল। তবে এ লিপির পাঠোদ্ধার সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে উৎকীর্ণ লিপিটি অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আরও জানা যায়, মূর্তিটির পাদস্তম্ভমূলে উৎকীর্ণ শিলালিপিটি হলো খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে প্রচলিত ব্রাহ্মী লিপি। এ ব্রাহ্মী লিপি এখানে শিকারী আর্য জাতির পদাচরণের প্রমাণ বলে কোনো কোনো গবেষক অনুমান করেন। আরও ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে এ স্থানে মানুষের বসবাস ছিল এবং বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল।
এখানে বিদ্যমান শিলা মূর্তিটির উপরে ব্রিটিশ আমল থেকে ছাউনি দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। আর ঘরটির চারপাশে লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল। এ কারণেই এলাকায় এটি শিল ঘর হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করে। তখন এটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন দারোয়ান ছিল। তবে কালের বিবর্তনে এখানে এখন কোনো রেলিং ও দারোয়ান নেই। ব্রিটিশ আমল থেকে এ প্রাচীন স্মৃতি নিদর্শনটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত রয়েছে।
শিলুয়া গ্রামের স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে আরও জানা যায় যে, শিলা মূর্তিটি হলো মহাশূন্য হতে ছিটকে আসা একটি শিলা খণ্ড। অনেকের কাছে এটি এখনও একটি জীবিত শিলা পাথর। কোনো এককালে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ শিলা খণ্ডকে ঘিরে পূজা অর্চনা করতো। মনের ইচ্ছে পূরণ হওয়ার ভাসনায় কোনো এক সময় লোকজন মানত করে এ শিলা খণ্ডের নিচ থেকে মাটি খেতো বলেও জানা যায়।
গবেষকগণ ধারণা করেন যে, এ মূর্তিটি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর পূর্বের একটি নিদর্শন। এ নিয়ে অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ মূর্তিটি যে অত্যন্ত প্রাচীন নিদর্শন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলে অনেক গবেষকই মনে করেন। [মো: শাহীন আলম]
তথ্যসূত্র:
১। যাকারিয়া, আবুল কালাম মোহাম্মদ, (২০১০), বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ, ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ৬৮২;
২। শিলুয়া মন্দির;
৩। শিলুয়ার শীল পাথর।
Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL