শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের বিশ্রামাগার, চাখার | Heritage

অবস্থান: শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নির্মিত বিশ্রামাগারটি বরিশাল জেলাধীন বানারীপাড়া উপজেলার চাখার গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গড়িয়ারপাড় নামক বাসস্ট্যান্ড থেকে স্বরূপকাঠিগামী পাকা সড়কপথ ধরে ২২ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে গুয়াচিত্রা নামক বাসস্ট্যান্ড। এ বাসস্ট্যান্ড থেকে সড়কপথ ধরে ৩ কিলোমিটার উত্তর দিক এগিয়ে গেলে চাখার গ্রাম। এ গ্রামের পূর্ব-পশ্চিমগামী চাখার বাজার-কলেজ রোডের সাথে লাগোয়া উত্তর পাশে এবং শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্নে এ বিশ্রামাগাটির অবস্থিত।

ঐতিহাসিক পটভূমি: অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক হলেন ভারত উপমহাদেশের একজন অবিসংবাদিত মহান নেতা। ২৬ অক্টোবর ১৮৭৩ সালে বরিশালের রাজাপুর (বর্তমানে ঝালকাঠী জেলাধীন) থানার সাতুরিয়া গ্রামে এ. কে. ফজলুল হক জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা- কাজী মুহাম্মদ ওয়াজেদ আলী এবং মাতা- বেগম সৈয়দুন্নেছা। পিতা কাজী মুহাম্মদ ওয়াজেদ ছিলেন একজর আইনজীবী। তাঁর পিতা আইন ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন এবং চাখারে জমিদারি ও তালুক ক্রয় করেন। পিতার মত তিনিও আইন পেশা গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তবে পিতার মৃত্যুর পরে ১৯০১ সালে তিনি বরিশালে ফিরে আসেন। তিনি বরিশালে আইন ব্যবসা শুরু করেন। আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি চাখারে পিতার জমিদারি ও তালুক দেখাশুনা করতেন। তাঁর কর্মময় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাজনৈতিক পদ অলংকৃত করেন। শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ১৯২১ সালে (বিশ্রামাগারটির সামনের দেয়ালে লিখিত) চাখারে তার পৈতৃক বসতভিটায় একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনের কিছু সময় তিনি চাখারে তাঁর এ বিশ্রামাগারে কাটান। তিনি ২৭ এপ্রিল, ১৯৬২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।

স্থাপত্যিক বিবরণ: শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের বিশ্রামাগার আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়। বিশ্রামাগারটির দৈর্ঘ্য ১১ মিটার এবং প্রস্থ ৮ মিটার। এটি ভূমি থেকে ১.২২মিটার উঁচু পাকা মঞ্চের (platform) উপরে নির্মাণ করা হয়। দক্ষিণমুখী এ বিশ্রামাগারটির অভ্যন্তরে ৩টি কক্ষ, ১টি শৌচাগার ও সামনে ১টি টানা বারান্দা রয়েছে। বিশ্রামাগারটির পশ্চিম অংশের বড় কক্ষটি দৈর্ঘ্য ৭ মিটার এবং প্রস্থ ৩.৬৬ মিটার, মাঝের কক্ষটি দৈর্ঘ্য ৫ মিটার এবং প্রস্থ ৩.৬৬ মিটার ও পূর্ব অংশের ছোট কক্ষটি দৈর্ঘ্য ৫ মিটার এবং প্রস্থ ২.১৪ মিটার। সামনের বারান্দাটির দৈর্ঘ্য ৬ মিটার এবং প্রস্থ ২ মিটার। বিশ্রামাগারটির সাথে সংযুক্ত সামনের সড়ক পর্যন্ত একটি সেতু (bridge) রয়েছে। সেতুটির  দৈর্ঘ্য ১৭ মিটার এবং প্রস্থ ১.৫ মিটার। প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত এ সেতুটির দুই পাশে ফুল ও ফলের ছোট বাগান রয়েছে। বিশ্রামাগারটিতে প্রবেশের জন্য সামনে ৪টি ও পিছনে ১টি প্রবেশপথ রয়েছে। পিছনের প্রবেশপথের সাথে উঠা-নামার জন্য একটি সিঁড়ি রয়েছে। পশ্চিম অংশের বড় কক্ষটিতে প্রবেশের জন্য ৭টি প্রবেশপথ রয়েছে। বিশ্রামাগারটিতে ছোট বড় ১৩টি জানালা রয়েছে। প্রবেশ পথ ও সামনের বারান্দার স্তম্ভের গায়ে স্থাপত্যশৈলীর কিছু অলংকরণ দেখা যায়। স্তম্ভগুলোর একটি অপরটির সাথে শিখরবিশিষ্ট খিলান নকশার প্যানেল দিয়ে সংযুক্ত। অষ্টভূজাকার স্তম্ভের গায়ে Acanthus পত্র নকশায় সজ্জিত করা হয়েছে। বিশ্রামাগারটির প্রত্যেকটি জানালায় খড়খড়িবিশিষ্ট কাঠের কপাট রয়েছে। উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত বিশ্রামাগারের ছাদটি সমতল। ১৯৭৫ সালে তোলা এক ছবিতে বিশ্রামাগারটির মঞ্চের (platform) নিচে ফাঁকা দেখা গেলেও বর্তমানে ফাঁকা জায়গাটি দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পিছনে দেয়ালের সাথে দুইটি সিঁড়ি দেখা গেলেও প্রবেশপথ রয়েছে কেবল একটি সিঁড়ির সাথে।


লেখক: মো. শাহীন আলম


 

Leave a Reply