প্রাটের সমস্থিতি মতবাদ ও প্রমাণ

পৃথিবীর উঁচু পাহাড়-পর্বত ও নিচু মালভূমি ও সমভূমিগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্য অবস্থা বিরাজমান রয়েছে, এ ধারণাকে কেন্দ্র করে সমস্থিতি (isostasy) মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে। ভূবিজ্ঞানীগণ এ সমস্থিতি মতবাদকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। পৃথিবীর এ ভারসাম্যাবস্থা সম্পর্কে ভূতত্ত্ববিদ জি বি এয়েরী (G. B. Airy) একটি সমস্থিতি মতবাদ উপস্থাপন করেন। এয়েরীর প্রদত্ত এ মতবাদের বিপরীতে ১৮৫৯ সালে ভূতত্ত্ববিদ Aren Diacen Pratt (A. D. Pratt) সমস্থিতির অপর একটি মতবাদ উপস্থাপন করেন। নিম্নে এ. ডি. প্রাট (A. D. Pratt) – এর প্রদত্ত সমস্থিতি মতবাদটি তুলে ধরা হল:

A. D. Pratt – এর মতবাদ: ভূতত্ত্ববিদ A. D. Pratt -এর মতানুসারে, পৃথিবীর সকল অংশের ঘনত্ব (density) সমান নয়। Pratt তাঁর মতবাদে উল্লেখ করেন, পৃথিবীর কঠিন তলের সকল অংশ পৃথিবীর অভ্যন্তরের তরল অন্তঃস্তর (fluid substratum) -এর উপরে একই সমতলে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। তবে পৃথিবীর কঠিন তলের উপরিভাগগুলো ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে সাম্য অবস্থার সৃষ্টি করেছে। Pratt আরও উল্লেখ করেন, পৃথিবীর কঠিন তলের যে অংশগুলোর ঘনত্ব সবচেয়ে কম, সে অংশগুলো পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে বেশি উপরে উঠেছে। অপরদিকে পৃথিবীর কঠিন তলের যে অংশগুলোর ঘনত্ব সবেচেয়ে বেশি, যে অংশগুলো কম উপরে উঠেছে। সমস্থিতি সম্পর্কে A. D. Pratt -এর প্রদত্ত এ ধারণাটিকে Level of Compensationও বলা হয়।

A. D. Pratt – এর ভূমি জরিপ: A. D. Pratt ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের কালিয়ানাপুর এবং কল্যাণপুরে একটি ভূমি জরিপ পরিচালনা করেন। এ স্থান দুইটির অবস্থান ভূমি জরিপ করতে গিয়ে যে সব পার্থক্য খুঁজে পান, সে সব পার্থক্যের উপরে ভিত্তি করে Pratt একটি মতবাদ পোষণ করেন। এ মতবাদে Pratt উল্লেখ করেন যে, যদি ভিন্ন ভিন্ন ঘনত্বের ব্লকগুলো ভারী মাধ্যমের উপর ভাসে, তাহলে এসব ব্লকের অপসারণ সমান হয় এবং এগুলো স্থিতিসাম্য অবস্থায় থাকে।

 

এ ডি প্রাটের সমস্থিতি, প্রাটের সমস্থিতি মতবাদ ও প্রমাণ

চিত্র – ১: A. D. Pratt -এর মতানুসারে, নিম্নভূমির তুলনায় হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত হওয়ায় পাহাড়-পর্বতগুলো অনেক উঁচু।

A. D. Pratt -এর মতবাদের পরীক্ষা ও প্রমাণ: পারদপূর্ণ একটি পাত্রে অনেকগুলো ব্লক নিয়ে পরীক্ষা করে A. D. Pratt তাঁর মতবাদ প্রকাশ করেন। পরীক্ষায় Pratt প্রমাণ করেন, ব্লকগুলোর আয়তন ভিন্ন ভিন্ন ছিল। কিন্তু এ ব্লকগুলোর নিচের অংশ পারদপূর্ণ পাত্রে একই সমতলে অবস্থান করেছিল। এ প্রমাণের উপর ভিত্তি করে Pratt মতামত দেন যে, সমতল ভূমি এবং পর্বত একই পদার্থ দিয়ে গঠিত। তিনি উল্লেখ করেন, আয়তনের পার্থক্যের জন্য ব্লকগুলোর নিচের অংশ একই সমতলে এবং এদের উপরের অংশে উচ্চতার পার্থক্য দেখা যায়। Pratt -এর ধারণার সত্যতা (authenticity) নিম্নের ২টি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা যেতে পারে।

প্রথম পরীক্ষা (1st experiment): যদি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ (যেমন- সমভূমি, পর্বত, মালভূমি ও সমুদ্রতল থেকে বিভিন্ন অংশ) কেটে এনে তরল অন্তঃস্তর (fluid substratum) -এর উপরে রাখা হয়, তাহলে এ খণ্ডাংশগুলো নিম্নের চিত্র – ২ মত ভাসমান অবস্থায় থাকবে। সবগুলো খণ্ডাংশের পাদমূল একই সমতলে অবস্থান করবে। তবে ঘনত্বের তারতম্যের কারণে এগুলোর উপরিপৃষ্ঠ বিভিন্ন উচ্চতায় উত্থিত হয়ে সাম্য অবস্থার সৃষ্টি করবে। এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে শর্ত হল –

(১) যদি এ খণ্ডাংশগুলোর প্রস্থচ্ছেদ ও ওজন সমান হয়;

(২) যদি এদের ঘনত্ব সমান না হয়; এবং

(৩) যদি এদের উচ্চতা ভিন্ন ভিন্ন হয়।

চিত্র – ২: A. D. Pratt -এর প্রথম পরীক্ষা (বর্ণনা অনুসারে)।

দ্বিতীয় পরীক্ষা (2nd experiment): পারদপূর্ণ একটি পাত্রে অনেকগুলো ব্লক বা খণ্ড (P1, P2 এবং P3) রাখা হলে এ ব্লক বা খণ্ডগুলো নিম্নের চিত্র – ৩ মত ভাসমান অবস্থায় থাকবে। সবগুলো খণ্ডাংশের পাদমূল একই সমতলে অবস্থান করবে। এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে শর্ত হল –

(১) যদি এ ব্লকগুলোর প্রস্থচ্ছেদ ও ওজন সমান হয়,

(২) যদি এদের ঘনত্ব সমান না হয়; এবং

(৩) যদি এদের উচ্চতা ভিন্ন ভিন্ন হয়।

চিত্র – ৩: A. D. Pratt -এর দ্বিতীয় পরীক্ষা (বর্ণনা অনুসারে)।

চিত্র – ৩ এ দেখা যায় যে, প্রস্থচ্ছেদ এবং  ওজনের দিক দিয়ে সমান ব্লকগুলো (P1, P2 এবং P3) তরল পদার্থের মধ্যে একই সমতলে অবস্থান করেছে এবং উপরের দিকে বিভিন্ন উচ্চতায় থেকে সাম্যের সৃষ্টি করেছে। খন্ডগুলো একই পরিমাণ তরল পদার্থ অপসারিত করেছে। সুতরাং, যে ব্লকের ঘনত্ব যত কম, উপরের দিকে তার উচ্চতা তত বেশি। [মো: শাহীন আলম]


প্রাটের সমস্থিতি মতবাদ ও প্রমাণ


সহায়িকা: 
১. মাহমুদ. কাজী আবুল, (২০০৩), ভূগোল কম্প্রিহেনসিভ, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৫-১৭।
২.  বাকী, আবদুল, (২০১৩), সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা।


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


 

Leave a Reply