হরিপুর রাজবাড়ি | ঠাকুরগাঁও

হরিপুর রাজবাড়ি | ঠাকুরগাঁও

হরিপুর রাজবাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে উপজেলা সার্ভার স্টেশন সংলগ্নে অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর রাজবাড়িটির ভূ-স্থানাঙ্ক বা জিও কো-অর্ডিনেট (অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ) হল 25°49’33.9″ N  88°07’47.2″ E (25.826069, 88.129787)।  

 এ রাজবাড়িটিতে রয়েছে একতলা ও দোতলা ভবন। জমিদার বাড়িটিতে বিদ‌্যমান স্থাপনাসমূহ নির্মাণে ইট, টালি, চুন, কাঠ, লোহার বর্গা প্রভৃতি উপকরণ ব‌্যবহার করা হয়েছে। একতলা ও দোতলাবিশিষ্ট স্থাপনাসমূহে সমতল ছাদ (flat roof), প্রবেশপথে অর্ধ-বৃত্তাকার খিলান (semi-circular arch) ও সেগমেন্টাল খিলান (segmental arch), বারান্দায় লোহার অলংকৃত র‌্যালীং (ornamented railing), দেয়ালে অলংকৃত আস্তর (stucco ornamentation) প্রভৃতি স্থাপত‌্যশৈলী প্রতিফলিত হয়েছে।

রাজবাড়ির দোতলা ভবনে লতাপাতার নকশা এবং দ্বিতীয় তলার পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের ১৪টি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। দোতলা প্রাসাদতুল্য ভবনটির দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যের নিদর্শনগুলো প্রাচীনত্বের বিবেচনায় খুব পুরাতন ও মূল্যবান না হলেও এ অঞ্চলের ১টি আকর্ষণীয় স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে মানুষকে আকর্ষণ করে। দোতলা ভবনটির পূর্বপাশে ১টি শিব মন্দির রয়েছে। এ মন্দিরের সামনে রয়েছে ১টি নাট মন্দির। জানা যায় যে, রাজবাড়িতে ১টি বড় পাঠাগার ছিল। বর্তমানে যার অস্তিত্ব নেই। আরও জানা যায় যে, রাজবাড়িটির যে সিংহ দরজা ছিল, তাও কালের আবর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

জানা যায় যে, ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে হরিপুর রাজবাড়িটির অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়। জনৈক ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম কুন্ডুর বংশধর রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সম্পন্ন করেন তারই পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। আরও জানা যায় যে, তৎকালীন সময়ে মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তাঁর বাড়ি ছিল মেদিনী সাগর গ্রামে। মেহেরুন্নেসা জমিদারির খাজনা দিতেন তাজপুর পরগনার ফৌজদারের নিকট। খাজনা অনাদায়ের কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে যায়।

তখন ঘনশ্যাম মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ কিনে নেন। ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন হলেন রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী। রাঘবেন্দ্র রায় খ্রিস্টীয় ১৯ শতাব্দীর মধ্যভাগে হরিপুর রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় খ্রিস্টীয় ১৯ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে রাজা বা রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত হন।

১৯০০ সালের দিকে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হয়ে যায়। যার ফলে হরিপুর রাজবাড়িটিও ২টি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। তাই রাঘবেন্দ্র-জগেন্দ্র নারায়ণ রায় কর্তৃক নির্মিত পুরাতন রাজবাড়িটি বড় তরফের রাজবাড়ি নামে পরিচিত। ১৯০৩ সালে হরিপুর রাজবাড়িটির ঠিক পশ্চিম দিকে নগেন্দ্র বিহারী রায় চৌধুরী এবেং গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরী আরেকটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। যার নাম দেয়া হয় ছোট তরফ। তবে হরিপুর রাজবাড়িটির প্রাসাদের দোতলার সামনের দেয়ালে ইংরেজিতে 1913 উৎকীর্ণ লেখা দেখা যায়। [মো: শাহীন আলম]


ঠাকুরগাঁও হরিপুর রাজবাড়ি


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply