মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি: তিনগম্বুজবিশিষ্ট গৌরনদীর কমলাপুর মসজিদ

মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি: কমলাপুর মসজিদ
বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জা ইউনিয়নের কমলাপুর নামক গ্রামে এ মসজিদটি অবস্থিত। গৌরনদী উপজেলা সদর থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক পথে উত্তর দিকে প্রায় ১০ কি.মি. এগিয়ে গেলে ইল্লা বাসস্ট্যান্ড। এ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাকা সড়ক পথে প্রায় ২ কি.মি. পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে তুলাতলা বাজার/কমলাপুর বাজারের অবস্থান। আর এ বাজার থেকে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে প্রায় ২৫০ মিটার দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলে মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি এ কমলাপুর মসজিদটি দেখা যায়।
মানচিত্র: কমলাপুর মসজিদের অবস্থান।
জনশ্রুতি রয়েছে যে, এ মসজিদটি মাসুম খান নামক একজন ব্যক্তির নির্মিত স্থাপত্যকীর্তি। নির্মাণশিল্প দেখে অনুমান করা হয়, এ মসজিদটি ১৭ শতাব্দীর কোনো এক সময়ে নির্মাণ করা হয়। তবে মসজিদের নির্মাণকাল বা ইতিহাসযুক্ত কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। ১৯৭৫ সালে এটিকে বাংলাদেশ সরকার সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে।

তিনগম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়। ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত এ মসজিদটির দেয়ালসহ দৈর্ঘ্য ১৭.২২ মিটার ও প্রস্থ ৮.০৮ মিটার। মসজিদের দেয়ালগুলো ১.৯০ মিটার চওড়া। মসজিদটির পূর্ব দিকের দেয়ালে ৩টি প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশপথগুলোর প্রত্যেকটিতে দু’টি করে খিলান রয়েছে। বাহিরের খিলানটি বহুপত্রাকার (multi-foil) এবং ভিতরের খিলানটি শিখরবিশিষ্ট (lancet)। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি অন্য দুটির তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড়। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি উপরের ও দুই পাশের প্যানেল (panel) বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা, গোলাপ, জালিকা প্রভৃতি অলঙ্করণে সমৃদ্ধ রয়েছে। মসজিদটির অলংকৃত পোড়ামাটির ফলকসমূহের সাথে সুলতানি আমলের অলংকৃত পোড়ামাটির ফলকের মিল রয়েছে । এছাড়া মসজিদটির বাহির দেয়াল ও মিনারগুলোর স্তম্ভ (column) জুড়ে বর্গাকার ও আয়তাকার প্যানেলখচিত বিভিন্ন জ্যামিতিক অলংকরণ রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে শিখর (lancet) খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথের মত জানালা রয়েছে।

মসজিদটির উপরে রয়েছে পদ্ম-কলস নকশা শোভিত চূড়া বা শিখরবিশিষ্ট (finial) ৩টি গম্বুজ। ছাদের কেন্দ্রে অবস্থিত গম্বুজটি আকারে বড়। গম্বুজ তিনটির চার দিকে অর্থাৎ ছাদের চারদিক ঘিরে সর্বমোট ৮ টি মিনার রয়েছে। পদ্ম-কলস নকশা শোভিত শিখরবিশিষ্ট (finial) মিনারগুলোর মধ্যে চারকোণের ৪ টি মিনার আকারে বড়। এ মিনারের স্তম্ভসমূহ (column) অষ্টভূজাকার। ছাদ বরাবর মসজিদটির চারদিকে কার্ণিশ রয়েছে। কার্ণিশগুলো সরল রেখায় প্রলম্বিত হয়ে চারকোণের স্তম্ভের সাথে যুক্ত হয়েছে।

মসজিদটির অভ্যন্তরের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মিহরাব রয়েছে। বহুপত্রাকার (multi-foil) খিলানবিশিষ্ট মিহরাব তিনটির মধ্যে কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত বড়। এছাড়া মসজিদটির ভিতরের দেয়ালে ছোট-বড় একাধিক কুলঙ্গি রয়েছে। চওড়া দেয়ালের উপর নির্মিত শিখরাকার সরু উঁচু খিলানে (lancet arch) ভর করে মসজিদটির তিনটি গম্বুজ অবস্থান করছে। এ মসজিদটির ভূমি-পরিকল্পনা, বাহির দেয়ালের অলংকরণ, ছাদের উপরের গম্বুজের অবস্থান, প্রবেশপথের অবস্থান, চারকোণের স্তম্ভ ও মিনার প্রভৃতির সাথে ঢাকার লালবাগ দুর্গ মসজিদটির নির্মাণশিল্পের আংশিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মুসলিম স্থাপত্যিক এ নিদর্শনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ও তত্ত্বাবধানে রয়েছে। [মো. শাহীন আলম]
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL