কর্ণ মাপনী | Diagonal Scale

কর্ণ বলতে সাধারণত আয়তক্ষেত্র কিংবা বর্গক্ষেত্রের পরস্পর বিপরীত দু’টি কোণের সংযোজক সরল রেখাকে বুঝায়। কর্ণকে ইংরেজিতে ডায়াগোনাল (diagonal) বলে। আর কর্ণের সাহায্যে অঙ্কিত মাপনীকে কর্ণ মাপনী (diagonal ‍scale) বলে। কর্ণ মাপনীকে আবার কর্ণীয় মাপনী বা কর্ণীয় স্কেল বলা হয়। যে কোন সরল রেখার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো নির্ধারণের জন্য একাধিক কর্ণের সাহায্যে সৃষ্ট মাপনী বা স্কেল ব্যবহার করা হয়। মূলতঃ একটি ক্ষুদ্র রেখাকে কতিপয় সমান ভাগে ভাগ করার জন্য এ ধরনের মাপনী বা স্কেলের পাঠ নেয়া হয়। 

যখন গজ ও ফুট; মাইল ও গজ; মাইল ও ফার্লং; মিটার ও ডেসিমিটার; কিলোমিটার ও হেক্টোমিটার;  কিলোমিটার ও মিটার প্রভৃতি দুই পরিসর (dimension) ভাগে স্কেল অঙ্কন করা হয়, তখন তাকে সরল স্কেল বলে। তবে যখন গজ, ফুট, ইঞ্চি; মাইল, ফার্লং, চেইন; কিলোমিটার, হেক্টোমিটার, ডেকামিটার; মিটার, ডেসিমিটার, সেন্টিমিটার প্রভৃতি তিন পরিসর (dimension) ভাগে স্কেল অঙ্কন করা হয়, তখন তাকে কর্ণ মাপনী বা কর্ণীয় স্কেল বলে। সাধারণ সরল স্কেলের তুলনায় কর্ণীয় স্কেল থেকে অধিকতর সূক্ষ্ম পরিমাপ পাওয়া যায়।

১৬২৩ সালে ইংরেজ গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড গুন্টার বা গান্টার (Edmund Gunter) কর্তৃক এ মাপনীটি উদ্ভাবিত। গান্টার স্কেল লগারিদম ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি মূলত স্লাইড নিয়মের (slide rule) একটি প্রাথমিক সংস্করণ। গান্টার (Gunter) এ স্কেলকে ভূমি জরিপের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। তাই এ ধরনের মাপনী বা স্কেল গান্টার্স স্কেল (Gunter’s Scale) নামে পরিচিতি পায়।

সব সরল স্কেলে কেবল প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায় নামক দুই ভাগে বিভক্ত করে অঙ্কন করা হয়েছে। দেখা যায় যে, দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাগগুলোতে প্রতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বেশ বড় অঙ্ক রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে স্কেলের ক্ষুদ্র ভাগে ৫,১০ বা ৫০ প্রভৃতি অঙ্ক বা সংখ্যা লেখা থাকে। তবে পরিমাপের সুবিধার জন্য অধিক সূক্ষ্ম বা ক্ষুদ্র ভাগের প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাগগুলোকে আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাগগুলোকে পুনরায় আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করার পদ্ধতিই হল কর্ণীয় মাপনী বা কর্ণীয় স্কেল।

কর্ণীয় স্কেল অঙ্কন পদ্ধতি: কোন একটি রেখাকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাগ করি। এরপর ঐ রেখার উভয় প্রান্তে উপর দিকে সমকোণে ২টি রেখা অঙ্কন করি। প্রয়োজন অনুসারে সমান ব্যবধানে একাধিক ভাগে ভাগ করতে হয়। অতঃপর অনুভূমিক (horizontal) রেখাটির সমান্তরাল করে উক্ত ভাগগুলোতে কয়েকটি সরলরেখা অঙ্কন করতে হয়। এখন অনুভূমিক নিচের রেখাটির প্রথম পর্যায়ের প্রতিটি ভাগ থেকে কয়েকটি উলম্ব (vertical) রেখা শীর্ষরেখা পর্যন্ত অঙ্কন করি। এরূপ অঙ্কন করলে স্কেলটি একটি ছকে বিভক্ত হয়। বাম পাশের ঘরটির শীর্ষরেখা দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাগের সদৃশ ভাগ করে নিচের রেখাটির ০,১,২,৩ প্রভৃতির সাথে উপরের রেখাটির ১,২,৩ ৪ প্রভৃতি আড়াআড়িভাবে (Diagonally) যোগ করা হলে ডায়াগোনাল স্কেল (Diagonal Scale)) বা কর্ণীয় মাপনী পাওয়া যায়।

কর্ণীয় স্কেল অঙ্কন পদ্ধতির উদাহরণ: প্র. অ. ১ : ৫০; গজ, ফুট ও ইঞ্চি পাঠের জন্য একটি কর্ণীর স্কেল অঙ্কন করি।

প্রশ্নানুসারে, প্রথম পর্যায়ের ভাগে গজ  চাওয়া হয়েছে। সুতরাং প্রতিভূ অনুপাতের (প্র. অ.) লব ও হর ইঞ্চি ধরে হর রাশিকে গজে পরিণত করতে হবে।

আমরা জানি, ১ গজ = ৩৬ ইঞ্চি; ১২ ইঞ্চি = ১ ফুট; ৩ ফুট = ১গজ।

প্রশ্নানুসারে, ১ ইঞ্চিতে ১ গজ = ৩৬ ইঞ্চি। এখন,

৩৬ ইঞ্চি যখন ভূমি দূরত্ব তখন মানচিত্র দূরত্ব ১ ইঞ্চি

১      ’’      ’’        ’’       ’’        ’’          ’’         ’’     ১/৩৬ ইঞ্চি

৫০    ’’      ’’        ’’       ’’        ’’          ’’         ’’   (১/৩৬) x ৫০ ইঞ্চি

= ১.৩৯ গজ বা ১.৪ গজ।

১.৪ গজ = ১৪/১০ গজ যখন ভূমি দূরত্ব, তখন মানচিত্রের দূরত্ব ১ ইঞ্চি

১ গজ যখন ভূমি দূরত্ব, তখন মানচিত্রের দূরত্ব (১/১৪) x ১০ ইঞ্চি

৭ গজ যখন ভূমি দূরত্ব, তখন মানচিত্রের দূরত্ব (১/১৪) x ১০ x ৭ = ৫ ইঞ্চি।

Diagonal Scale

উদাহরণ অনুসারে কর্ণীয় স্কেল অঙ্কন পদ্ধতি: এখন ৫ ইঞ্চি দীর্ঘ একটি রেখা অঙ্কন করি। রেখাটিকে প্রথম পর্যায়ে ৭ ভাগে ভাগ করলে প্রতি ভাগ ১ গজ করে হয়। বাম পাশের ভাগটিকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩ ভাগে ভাগ করি। ৩ ফুট = ১ গজ হিসেবে প্রতি ভাগ ১ ফুট করে হয়। ৫ ইঞ্চি রেখার উভয় পাশে উপর দিকে দুইটি রেখা অঙ্কন করি। এরপর উভয় রেখাকে ১২ ভাগে (১২ ইঞ্চি = ১ ফুট) ভাগ করে অনুভূমিক রেখার সমান্তরাল ১২টি রেখা অঙ্কন করতে হয়। নিচের রেখাটির প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ভাগ থেকে উলম্ব রেখা অঙ্কন করতে হয়। তারপরে বাম পাশের ভাগটির শীর্ষরেখা নিচের রেখাটির মত ৩ ভাগে ভাগ করে নিচের রেখাটির ০, ১ ও ২ এর সাথে শীর্ষ রেখার ১, ২ ও ৩ আড়াআড়িভাবে মিলিত করলে স্কেলটি পাওয়া যায়। প্রাপ্ত স্কেলটির ডান পাশে গজ, বামপাশে ফুট এবং উলম্ব পাশে ইঞ্চি লিখতে হয়। সর্বশেষে স্কেলের নিচে এর প্রতিভূ অনুপাত (প্র. অ. বা R.F) ১ : ৫০ লিখতে হয়। [মো: শাহীন আলম]


সহায়িকা: রউফ, কাজী আবদুল এবং মাহমুদ, কাজী আবুল, ২০২০-২১, ফলিত ও ব্যবহারিক ভূগোল, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *