কালবৈশাখী ঝড় এবং এ ঝড়ের কারণ ও প্রভাব
কালবৈশাখী একটি স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড় (thunderstorm), যা বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে সংঘটিত হয়ে থাকে। যার প্রধান কারণ হলো নিম্নচাপ। নিচে কালবৈশাখী ঝড় এবং এ ঝড়ের কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে:
কালবৈশাখী বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ ঝড় সাধারণত বৈশাখ মাসে সংঘটিত হয় বলে একে কালবৈশাখী ঝড় বলে। কালবৈশাখী শব্দের ‘কাল’ এর অর্থ ঋতু (season), আবার ‘কাল’ শব্দটির দ্বারা কালো (black) বর্ণকেও বুঝানো হয়। কখনও কখনও কালবৈশাখীকে ‘কালোবৈশাখী’ নামেও ডাকা হয়। যার অর্থ কালো (black) বর্ণের বৈশাখী মেঘ। আমরা অনেকেই জানি যে, ধ্বংসকারীকে ‘কাল’ বলেও ডাকা হয়। আর, ঘন ও কালো বর্ণের মেঘ ও ঝঞ্ঝা এবং ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির কারণেও এ ঝড়টির এ ধরনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। শীতের পর গ্রীষ্মের আবির্ভাবের সময় প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে ভারত মহাসাগর এবং এর উপকূলবর্তী দেশসমূহে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তা কালবৈশাখী নামে পরিচিত। সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এ ঝড়ের উৎপত্তি হয়। তাই কালবৈশাখী ঝড়কে উত্তর-পশ্চিম বজ্র-বিদ্যুৎপূর্ণ ঝড়বৃষ্টিও বলা হয়।
যে অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড় প্রভাবিত হয়: কালবৈশাখী ঝড় সাধারণত বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, প্রভৃতি স্থানে মার্চ-এপ্রিল মাসে সাধারণত বিকাল ও সন্ধ্যার দিকে সংঘটিত হয়। মাঝে মধ্যে সকাল কিংবা ভোর রাতেও কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে দেখা যায়।
কালবৈশাখী ঝড়ের কারণ: কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো নিম্নচাপ। এ নিম্নচাপের ফলে বাতাস উপরে উঠে যায়। যার কারণে নিম্নচাপ কেন্দ্রের বায়ু শূন্যস্থান পূরণের জন্য চারদিক থেকে শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়ে প্রচন্ড বেগে ছুটে আসে। ফলে নিম্নচাপের কেন্দ্রের বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের মিলনস্থানে বজ্র-বিদ্যুৎসহ কালবৈশাখী ঝড়ের উৎপত্তি হয়। সাধারণত ভূ-ভাগের উপরে প্রচণ্ডবেগে প্রবাহিত বাতাসসহ বজ্র-বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে এ ধরনের ঝড় স্বল্পকাল স্থায়ী হয়।
কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাব: কালবৈশাখী ঝড়ের ফলে উষ্ণতা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও প্রচন্ড বেগে বাতাস ঘূর্ণির আকারে প্রবাহিত হয়। কালবৈশাখী ঝড়ের ফলে সংঘটিত এলাকা ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। এ ঝড়ের গতি সাধারণত ৪০ কি.মি থেকে ৮০ কি.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। কখনও কখনও এ ঝড়ের গতি আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ কি.মি. এর অধিক হয়। ঝড়ের ফলে গাছপালা, পশু, পাখি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কখনও কখনও দেখা যায়, এ ঝড়ে প্রচুর পরিমাণে মানুষের প্রানহানিও ঘটে থাকে। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টি সংঘটিত হয়, যার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয় এবং মানুষের বসতি নষ্ট হয়। কখনও কখনও কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত এলাকায় কিছুদিনের জন্য মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়ে থাকে। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: মজুমদার, তাপস কুমার, ভূগোল, লেকচার পাবলিকেশন লি., ঢাকা, পৃ: ২০৫।