গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস: যেভাবে ইতিহাসের জনক হয়ে উঠলেন

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস (Herodotus) খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে তাঁর গবেষণাকর্মের নামকরণে সর্বপ্রথম Historia শব্দটি ব্যবহার করেন। এ Historia শব্দ থেকে ইংরেজি History শব্দটির উৎপত্তি। History শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘ইতিহাস‘। আর Historia শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল ‘সত্যানুসন্ধান’ বা ‘গবেষণা’।
হেরোডোটাস মনে করতেন, ইতিহাস হল- যা সত্যিকার অর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল, তা অনুসন্ধান করা এবং লিপিবদ্ধ করা। তিনি গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় তাঁর গবেষণাকর্মে অনুসন্ধান করেছেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত, বিভিন্ন ঘটনা এবং গ্রিসের বিজয়ের কথা তিনি তাঁর গবেষণা প্রবন্ধে তুলে ধরেন। তাঁর এ গবেষণা কাজের উদ্দেশ্য হল- পরবর্তী প্রজন্ম যেন এ যুদ্ধ সম্পর্কিত সত্য ঘটনা ভুলে না যায়। এ ঐতিহাসিক বিবরণ যেন পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহিত করে এবং স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। হেরোডোটাসই সর্বপ্রথম ইতিহাস ও অনুসন্ধান– এ শব্দ দুটির ধারণাকে একত্রিত করেন। তিনি ইতিহাস অনুসন্ধানে সর্বপ্রথম পদ্ধতিগতভাবে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করেন, সংগৃহীত উপাদানগুলোর সত্যতা নিরূপণে উদ্যোগ নেন এবং তা যথাক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যায় বিন্যস্ত করেন। যা ইতিহাসকে পরিপূর্ণভাবে তথ্যনির্ভর এবং গবেষণার বিষয়ে পরিণত করে। যার ফলে ইতিহাস পরিণত হয় একটি বিজ্ঞানে।
ইতিহাসকে তথ্যনির্ভর, পদ্ধতিগত গবেষণার বিষয় এবং বিজ্ঞান হিসেবে উপস্থাপনে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনকের খ্যাতি এনে দেয়। রোমান ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক সিসেরো, হেরোডোটাসকে ‘ইতিহাসের জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। The Histories নামক গ্রন্থটি তাঁর একটি অমর সৃষ্টিকর্ম। সুখ্যাতির সাথে হেরোডোটাসের একটি কুখ্যাতি রয়েছে। আরেক গ্রিক ইতিহাসবিদ মেস্ত্রিউস লুসিয়াস প্লুতার্ক (আনু. ৪৬ – ১২০ খ্রিস্টাব্দ) হেরোডোটাসকে ‘মিথ্যার জনক’ বলে আখ্যায়িত করেন। উল্লেখ্য যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৪ অব্দে হেরোডোটাস এশিয়ার মাইনরের হালিকারণাসাস, কারিয়তে (বর্তমান তুরষ্কের বোদরামে) জন্মগ্রহণ করেন। [সংকলিত] [মো: শাহীন আলম]