প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, নমুনা ও কৌশল
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ (archaeological properties) বা পুরাকীর্তি। আর এ প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা পুরাকীর্তি খোঁজে বের করার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকগণ প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান পদ্ধতি ও কৌশলের ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ (১) জরিপ ও অনুসন্ধানপূর্ব গবেষণা, (২) মাঠকর্ম, (৩) মাঠকর্ম পরবর্তী গবেষণা ও (৪) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন, এ চারটি সাধারণ ধাপ অনুসরণ করেন। এ প্রবন্ধটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনের ধাপটি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সাধারণত মাঠ পর্যায়ে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানকালে খোঁজে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা স্থান বা পুরাকীর্তি, প্রত্নবস্তু ও নমুনা; স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত; ভূ-স্থানাঙ্ক, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত; এবং প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত জার্নাল ও গ্রন্থসমূহের বর্ণনা পর্যালোচনা শেষে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিকগণের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনের মৌলিক বিষয়গুলো প্রায় একই রকম থাকে। সহজভাবে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, নমুনা ও কৌশল আলোচনার অংশ হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদনের একটি নমুনা (sample of archaeological survey report) নিম্নে তুলে ধরা করা হলো।
১। প্রথম অংশ (Part I)
১.ক) শিরোনামসহ প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদনের প্রচ্ছদ
১.খ) সূচিপত্র (Index)
১.গ) মুখবন্ধ (Preface)
১.ঘ) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা স্থান বা পুরাকীর্তির মানচিত্র সূচি
১.ঙ) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা স্থান বা পুরাকীর্তির সারণি সূচি
১.চ) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা স্থান বা পুরাকীর্তির আলোকচিত্র সূচি
১.ছ) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা পুরাকীর্তির রেখাচিত্র সূচি
১.জ) প্রত্নতাত্ত্বিক ঢিবির ক্রস সেকশন সূচি
১.ঝ) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা পুরাকীর্তির গ্রাউন্ডপ্লান সূচি
১.ঞ) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বা পুরাকীর্তির সাইটপ্লান সূচি ও অন্যান্য (যদি থাকে)
২। দ্বিতীয় অংশ (Part II)
নির্বাচিত প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান এলাকার পটভূমি ও পরিচিতি
২.ক) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানের বর্ণনা;
২.খ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার ভূ-প্রকৃতির বর্ণনা;
২.গ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার ভূমিরূপ গঠনের বর্ণনা;
২.ঘ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার মৃত্তিকার বর্ণনা;
২.ঙ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা বা নদনদী সম্পর্কিত বর্ণনা;
২.চ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার জলবায়ু সম্পর্কিত বর্ণনা;
২.ছ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার জনসংখ্যা সম্পর্কিত বর্ণনা;
২.জ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার নামকরণের ইতিহাসের বর্ণনা ;
২.ঝ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এলাকার ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বর্ণনা ও অন্যান্য তথ্য (যদি থাকে);
৩। তৃতীয় অংশ (Part III)
৩.ক) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান পদ্ধতি ও কৌশলের বর্ণনা;
৩.খ) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বর্ণনা;
৪। চতুর্থ অংশ (Part IV)
৪.ক) প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের বা স্থানের বা পুরাকীর্তির বর্ণনা (ধারাবাহিকভাবে);
৫। পঞ্চম অংশ (Part V)
৫.ক) সুপারিশমালা (প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের বা পুরাকীর্তি সম্পর্কে যদি কোন সুপারিশ থাকে);
৫.খ) প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বা পুরাকীর্তি সম্পর্কে তথ্য ও মতামত প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কিত তথ্য;
৫.গ) সহায়ক গ্রন্থাবলী;
৫.ঘ) পরিশিষ্ট-১: প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান ফরম;
৫.ঙ) পরিশিষ্ট-২: প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বা পুরাকীর্তি সম্পর্কিত মতামত ফরম;
৫.চ) পরিশিষ্ট-৩: প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানে প্রাপ্ত বা সংগৃহীত নমুনা (samples) ও অন্যান্য তথ্য (যদি থাকে)।
পরিশেষে, বলা যায় যে উপর্যুক্ত প্রতিবেদনের নমুনাটি একটি সাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন ফরমেট। ফরমেটটিতে উল্লেখিত এসব মৌলিক বিষয় ধারাবাহিকভাবে রেখে যে কোন প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন প্রণয়ন করা যায়। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ চাইলে তার নিজের মত করে আরও যে কোন বিষয় সংযুক্ত করে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেন। [মো: শাহীন আলম]